‘মাছে-ভাতে বাঙালি’-প্রবাদটি যথার্থ। কিন্তু বাস্তবে মিলবে না। গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ এ সবই এখন অতীত। কারণ অধিকাংশ মাছের স্বাদ-গন্ধ যেন উধাও হয়ে গেছে। সবগুলোতেই এখন স্বাদ-গন্ধ অনুপস্থিত। বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল নদী, খাল, বিল ও পুকুরের পানিতে এসে মিশে দেশীয় প্রজাতির শিং, কৈ, টেংরা, পুঁটি, মলা, মাগুর মাছসহ ইত্যাদি প্রজাতি রামগঞ্জ থেকে প্রায় বিলুপ্তির পথে নিয়ে গেছে।
দেশে একসময় প্রায় ৩০০ প্রজাতির মাছ ছিল, যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি প্রজাতির বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তো নদী-নালা, খাল-বিলের সেসব মাছ চোখেই দেখেনি। পুকুর কিংবা যে কোনো জলাশয়ে চাষ করা মাছের একমাত্র ভরসা কৃত্রিম খাবার। মাছচাষ এখন এক প্রতিযোগিতার নাম। বেশি উৎপাদনের লোভে অল্প জায়গায় মাছচাষ করা হচ্ছে। নানা ধরনের খাবার দিয়ে এসব মাছ বেলুনের মতো ফুলিয়ে মোটাতাজা করা হয়। এ কারণেই এসব মাছে কোনো স্বাদ-গন্ধ নেই। পুকুরে এখন রুই, কাতল, মৃগেল, পাঙ্গাশ, তেলাপিয়া, সরপুঁটি, মাগুর, শিং, কই, পাবদা, ইত্যাদি মাছ চাষ করা হয়। এতে করে দেশের মানুষের মাছের চাহিদা হয়তবা পূরণ হচ্ছে কিন্তু দেশীয় মাছের যে স্বাদ বা পুষ্টি তা আমরা পাচ্ছি না। আগে দেশীয় একটি কই মাছ বা শিং মাছ খেয়ে যে তৃপ্তি পাওয়া যেত তা এখন চাষ করা মাছে পাওয়া যায় না। বাণিজ্যিক আকারে মাছ চাষের কারণে বিভিন্ন খাবার বা ঔষধ মাছে প্রয়োগ করা হয় এতে করে দেশীয় প্রজাতির মাছের স্বাদ থাকে না।
এছাড়া মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্হল ধ্বংস করা এবং ক্ষতিকর মৎস্য আহরণ সরঞ্জামের ব্যবহার। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এসব মাছের বিভিন্ন নাম রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- চ্যাপিলা, বইচা, চাটুয়া, নাপতানি, চাঁদা, আইড়, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি, ভেদা, শিং, কই, টাকি, তেলা টাকি, ফলি, চেলি, মলা, ঢেলা, কানপোনা, দারকিনাসহ নাম না জানা অনেক প্রজাতির দেশীয় মাছ। অন্যদিকে এসব মাছ যখন ডিম ফুটে বাচ্চা বের করবে ঠিক সে সময় এই মাছগুলো আহরণ করা হচ্ছে। এর ফলে এ মাছগুলো ডিম অবস্থায় ধরা পড়ছে। মাছগুলোর এমন ধরা পড়ার ফলে সম্ভাবনাময় অনেক মাছগুলো অকালে প্রাণ দিতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আবার অতি ক্ষুদ্র মাছ আহরণ করা হয় যার ফলে এই মাছগুলোর বিলুপ্তি নিশ্চিত। বর্তমান প্রজম্ম এসব দেশি জাতের মাছের কথা ভুলে যেতে চলছে। তাদের কাছে যখন দেশি মাছের কথা আলোচনা করা হয় তখন তারা এমন ভাব করে যেন এই নামগুলো এই প্রথম শুনছে।
রামগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর আবুল কাশেম জানান, বিলে একসময় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বাজারগুলোও ভরে যেত দেশীয় মাছে। অথচ বিলের অধিকাংশ এলাকা এখন ফসল চাষের আওতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার ও পানি স্বল্পতার কারণে এখন আর মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। আকারে ছোট হলেও এসব দেশীয় মাছ পুষ্টিগুণে সেরা। তাই এসব মাছ বিলুপ্তির কারণে পুষ্টির বড় উৎসও হারিয়ে যাবে।