লক্ষ্মীপুরে বেসরকারি ‘নিউ মডেল হসপিটাল প্রাইভেট’ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় অপারেশন থিয়েটারে মৃত নবজাতক শিশু সন্তান জন্মানোর অভিযোগ উঠেছে। নবজাতকের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে প্রসূতি গৃহবধুর স্বজনদের ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়। এনিয়ে উভয়ের মধ্যে বাক-বিতান্ডার ঘটনা ঘটে। ১৩ জুলাই মঙ্গলবার দুপুরে শহরের দক্ষিণ তেমুহনী এলাকায় ওই হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভুগি প্রসূতী গৃহবধু আয়েশা বেগম (২৮) লক্ষ্মীপুর পৌর লামচরী গ্রামের দিনমজুর রিকসা চালক মো. রাজুর স্ত্রী।
প্রসূতির স্বাশুড়ি হোসনে আরা বেগমসহ স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধুকে শুরু থেকেই সকল গাইনি চিকিৎসা নিউ মডেল হসপিটালের চিকিৎসক ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুনের কাছে করাতেন রিকসা চালক রাজু। ডাক্তার মামুন লক্ষ্মীপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক। গত একসপ্তাহ পূর্বেও গৃহবধুকে ওই হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। ঘটনার দিন মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ গৃহবধুর প্রস্রব বেদনা উঠলে নিউ মডেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এসময় আল্ট্রান্সোগ্রাফি ও রক্ত পরীক্ষা করার কথা বলে ডাক্তারের অপেক্ষায় তিন ঘন্টা অভ্যর্থনা কক্ষের সামনে প্রসূতিকে স্টেচারের উপর ফেলে রাখে হাসপাতালের দায়িত্বরতরা। এসময় একাধিক বার বলার পরেও কোন চিকিৎসক না আসায় ডাক্তারি পরীক্ষা করানো সম্ভব হয়নি। এতে প্রসূতির অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে।
একপর্যায়ে স্বজনদের কিছু না জানিয়ে প্রসূতি গৃহবধুকে দ্রুত অপরেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় রজি নামে একজন নার্স। এসময় অভিজ্ঞ ডাক্তার না থাকায় নার্স রজি একাই ওই প্রসূতির নরমাল ডেলিভারী করাতে গেলে নবজাতকের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন স্বাশুড়িসহ স্বজনরা। এসময় নবজাতকের মৃত্যুর কারণ জানতে গেলে প্রসূতির শ্বাশুড়িকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতান্ডা সৃষ্টি হয়। এ পর্যায়ে হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার আশাফুর রহমান মামুন এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
এঘটনায় বিচার দাবী করে প্রসূতির স্বামী রিকসা চালক মো. রাজু কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, রিকসা চালিয়ে সংসার চালাই। ঘটনার সময় বার বার ডাক্তার মামুনকে ফোন দিয়েও পাইনি। প্রস্রব বেদনা থাকার পরও তিনঘন্টা ফেলে রাখায় এবং চিকিৎসার অবহেলায় আমার নবজাতক শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে নিউ মডেল হসপিটালের সার্জন ও গাইনোকলোজিষ্ট ডাঃ আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, প্রসূতির অবস্থা বেশি ভালো ছিলো না। নিয়মানুযায়ী ডিউটি ডাক্তার ইফতেখার আহমেদ আফসার, নার্স হিরোলা হ্যামরোল ও রজি’র সমন্বয়ে নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। উল্টো হওয়ায় মৃত নবজাতকের জন্ম হয়েছে। এতে চিকিৎসায় কোন অবহেলা ছিলো না বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দিয়েও বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply