লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রিয়াদ হোসেনের কার্যালয় থেকে উধাও হওয়া রহস্যময় টাকার সংখ্যা নিয়ে জট সৃষ্টি হয়েছে। কার্যালয়ে এত টাকা কোথা থেকে এলো- এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সর্বত্র আলোচনা সমালোচন অব্যহত আছে। এ অবস্থায় পিআইও নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে অসঙ্গতিপূর্ণ নানানরকম বক্তব্য দিচ্ছেন যাচ্ছেন
এদিকে ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জন্য ৩০ জুন বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শতরুপা তালুকদার কমলনগরে তদন্তে গেছেন। এসময় তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মচারী ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে পিআইও রিয়াদ “১৬ লাখ” টাকা খুঁজতে ২৮ জুন বিকেলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুল বাকেরের বাসায় তল্লাশি চালিয়েছেন। বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যদিও এ ঘটনায় ঐ দিন সোমবার সন্ধ্যা থেকে পরদিন মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কার্যালয়ের চার কর্মচারীকে থানায় আটক রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পিআইও নিজেই তাদের সেখান থেকে ছাড়িয়ে নেন।
৩০ জুন বিকেল ৫টার দিকে পিআইও রিয়াদ হোসেন জানান, কার্যালয়ের আলমিরা থেকে প্রশিক্ষণের সম্মানীর জন্য রাখা তিন লাখ ২০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে। এজন্য কর্মচারী বাকেরসহ চারজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন ৩০ হাজার টাকা চুরি হয়েছে।
রিয়াদ হোসেন দাবি করেন, বাকেরের তথ্যমতে কার্যালয়ের বাথরুমের ওপর থেকে ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য তাকে সময় দেয়া হয়েছে। টাকা উদ্ধারে কেন মামলা করা হচ্ছে না, টাকার সংখ্যা নিয়ে কেন নানান ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন- এসব প্রশ্নে তিনি নিরব থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, পিআইওকে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কমিশন দিতে বাধ্য করা হয়। তার বেপরোয়া আচরণের কারণে ইউপি চেয়ারম্যান’রা ক্ষুব্ধ। “ঘুষের ১৬ লাখ” টাকা চুরির ঘটনায় অফিসের কর্মচারীদের হয়রানি করা হয়েছে। এখন ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাটক সাজানো হচ্ছে বলে আমরা শুনেছি।
তবে এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে বাকের হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিক কল করে বন্ধ পাওয়া যায়। বিকেলে বাকেরের স্ত্রী শারমিন আক্তার বলেন, অফিসে নিয়ে আমি ও আমার স্বামীকে ৩০ হাজার টাকা চুরির স্বীকারোক্তি এবং আমার অভিযোগ মিথ্যা বলতে বাধ্য করা হয়েছে। এসময় আমাদের কাছ থেকে লিখিত নেয়া হয়। আমার স্বামী ছোট চাকরি করে, চাকরি হারানোর হুমকি দিয়ে এসব অবিচার করা হয়েছে।
এর আগে ২৯ জুন দুপুরে শারমিন আক্তার হয়রানির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তার অভিযোগ, পিআইও তাকে কয়েক দিন থেকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছেন। রাজি না হওয়ায় তার স্বামীকে থানায় আটক রেখে হয়রানি করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রাসেল ইকবাল বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এজন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শতরুপা তালুকদার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।
এ বিষয়ে জানতে তদন্তকারী কর্মকর্তা শতরুপা তালুকদারকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল করেও পাওয়া যায়নি
Leave a Reply