লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আদম ব্যাপারীর খপ্পরে পরে পৌর ২নং ওয়ার্ডের দেনায়েত মৌজার বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের পুত্র মোঃ রুবেল হোসেন (২৭) সাড়ে চার লক্ষ টাকা খুইয়ে এখন পথে পথে। একই উপজেলার ৩নং ইউনিয়নের চরমোহনা মনগাজি মিজি বাড়ির খোরশোদের পুত্র ‘প্রতারক’ বাবুলের প্রতারণার চক্করে পড়ে সহায় সম্বলহীন হয়ে বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ভুক্তভুগি ঐ যুবক।
জানা যায়, রায়পুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের দেনায়েত পুর মৌজার বাসিন্দা শাহ আলম ও মনোয়ারা দম্পতির পুত্র মোঃ রুবেল হোসেনকে নানানরকম প্রলোভন দেখিয়ে সৌদি আরবের একটি ভিসা দেয় একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল মিঞা। কথা ছিলো সৌদি আরবের রিয়াদ সিটিতে একটি কারখানায় চাকুরী হবে। যার ফলশ্রুতিতে ভিসা বাবত রুবেলের মা মনোয়ারা বেগমের কলেজ পড়ুয়া মেয়ের বিবাহ দেয়ার জন্য সঞ্চয়ের একলক্ষ সত্তর হাজার টাকা বাবুল মিঞাকে নগদে প্রদান করে। ভিসা প্রসেসিং, বিমান ভাড়া সহ সর্ব সাকুল্যে মোট চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করার পর রুবেলকে সৌদি আরব পাঠায় আদম ব্যাপারী বাবুল।
ভিসা দেওয়ার পূর্বে কথা ছিলো বাবুল মিঞা নিজে সৌদি যাবে এবং যাওয়ার সময় রুবেল কে সঙ্গে করে নিবে। কিন্তু তা না করে প্রথমেই চুক্তি ভঙ্গ করেছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।
আরো জানা যায়, রুবেলকে বিমান বন্দরে রিসিভ করে তার কফিলের কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা থাকলেও বাবুলের লোক আসেনি, যার কারনে ভুক্তভোগী রুবেল দীর্ঘ ৬ ঘন্টা সময় ধরে বিমানবন্দরে অপেক্ষা শেষে পরবর্তীতে সৌদিতে থাকা তার মামাকে ফোন করলে তিনি গিয়ে রুবেলকে তার কাছে নিয়ে আসেন বলে ভুক্তভোগী এ প্রতিবেদকে জানান। পরে সৌদির ভিসা দাতা কফিলের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমিতো বাবুলকে ভিসা দিয়েছি অন্য কাউকে নয় বলে রুবেলের সৌদী আরবের প্রাপ্ত প্রাথমিক নব্বই দিনের ভিসাটি বাতিল করে দেন। বাধ্য হয়ে দেশের থেকে ধার দেনা করে বিমান ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে রুবেলকে দেশে নিয়ে আসেন তার আত্মীয় স্বজন।
এদিকে বাংলাদেশে বাবুলের সাথে যোগাযোগ করলে সে সন্তোষ জনক কথা না বলে গা-ঢাকা দেন। উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী রুবেলের মা মনোয়ারা বেগম সদ্য নির্বাচিত রায়পুর পৌর কাউন্সিলর মাহবুবুর রহমান রিজভীকে সাথে নিয়ে প্রতারক আদম ব্যপারী বাবুলের বাড়ি রায়পুরের ৩নং ইউনিয়নের চরমোহনা মনগাজি মিজি বাড়িতে যান। সেখানে গেলে বাবুলের সাথে স্বাক্ষাত না পাওয়ায় তার বাবা মোঃ খোরশেদ আলম রুবেলে মাতা মনোয়ারা বেগমকে বলেন, আমার ছেলে সৌদী আরব গিয়ে সব ঠিক করে দিবে, যদি কোন কারনে ব্যর্থ হয় তাহলে ক্ষতি পুরন সহ সব টাকা আমি পরিশোধ করিতে বাধ্য থাকিবো।
এদিকে ভুক্তভুগি রুবেল গত ১২ ফেব্রুয়ারী চাকুরীর আসায় সহায় সম্বল খুইয়ে ও ধার-দেনা করে চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করে বাবুলের দেয়া ভিসা নিয়ে সৌদি প্রবেশ করে কিন্তু কফিল তাকে গ্রহন না করায় সে গত ১৪ মার্চ দেশে ফেরত এসে ‘প্রতারক’ বাবুলের পিতা খোরশেদ আলমের সঙ্গে স্বাক্ষাত করে। তখন তিনি পূর্বের কথা না রেখে বিভিন্ন ভাবে এলোমেলো কথা বলেন। এতে করে মনোয়ারা বেগম উপায় না পেয়ে বাদ্য হয়ে এ বিষয়ে রায়পুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে ‘প্রতারক’ বাবুলের পিতা খোরশেদ মিয়ার নাম্বারে যোগাযোগ করেল তিনি ফোন না ধরে উনার স্ত্রীকে ধরিয়ে দেন এবং নারী কন্ঠে একজন বলেন, আগামী কাল ৬ এপ্রিল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ওসি সাহেব থানায় যেতে বলেছেন। মহিলার নাম ও পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তার নাম কি তা জানেন না বলে ফোন রেখে দেন।
এব্যাপারে রায়পুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পুলিশ পরিদর্শক আবদুল জলিলের নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খুব পেরেশানিতে আছি, গতকাল (রবিবার) ভুক্তভোগী নারী মনোয়ারা বেগম, সালিস দার শিপন পাটোয়ারী ও মেম্বার মাসুদসহ এসেছে, তারা কখন টাকা দিবে তা পরবর্তীতে জানাবে।
Leave a Reply