লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) একাংশের মহাসচিব ও ২০ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা শাহাদত হোসেন সেলিম। তিনি বলেছেন, সরকারবিরোধী আন্দোলন সফলে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ পস্ন্যাটফর্ম গঠনের বিকল্প নেই। আর তা গঠনে সব দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদের মনের সংকীর্ণতা দূর করতে হবে। সংকীর্ণতা পরিহার না হওয়া পর্যন্ত সরকারবিরোধী ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম সম্ভব নয়।
সম্প্রতি একটি গণমাধমের সাথে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় দল ও জোটের ভবিষ্যৎ, আন্দোলনসহ জাতীয় রাজনীতির নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেন এলডিপি মহাসচিব।
প্রশ্ন :এলডিপির সাংগঠনিক অবস্থা কী?
শাহাদাত হোসেন সেলিম :এলডিপি ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে। তার পরপরই করোনা মহামারির কারণে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে কিছুটা ভাটা পড়ে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কারণে বিভিন্ন জেলায় সাংগঠনিক সফর স্থগিত রাখি। এরপরেও বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। করোনাকালে দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালানো হয়েছে। গত ২৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে এলডিপির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। অচিরেই দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।
প্রশ্ন : জোট রাজনীতিতে আপনার দলের ভূমিকা কী?
সেলিম :দীর্ঘদিন ধরে জোটগত কর্মকান্ড চলছে না। ইতঃপূর্বে ২০ দলীয় জোটের যেসব কর্মকান্ড গ্রহণ করা হয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তাতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। আগামীতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের যেকোনো কর্মকান্ডে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করব।
প্রশ্ন : ২০ দলীয় জোটের কোনো কর্মকান্ড নেই কেন?
সেলিম :একেবারে নেই তা বলা যাবে না। দেশে করোনা মহামারি চলছে, এ জন্য একটু ঢিলেঢালা মনে হচ্ছে।
প্রশ্ন : ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কোনো উদ্যোগ আছে কি না?
সেলিম :বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক সরকারকে অপসারিত করতে হলে নূ্যনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে সব দল, জোট, ফ্রন্ট, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বসহ সব পেশাজীবীকে নূ্যনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে এক মঞ্চে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। সব সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে এই সরকারের অপসারণের লক্ষ্যে এক দফা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে সব সংকীর্ণতা পরিহার করতে হবে।
প্রশ্ন : জাতীয় নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণগুলো কী কী?
সেলিম :জাতীয় নির্বাচনে বিপর্যয়ের একমাত্র কারণ প্রশাসন একটি দলের পক্ষে সরাসরি অবস্থান গ্রহণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারি দলের পেটুয়া বাহিনী হিসেবে মাঠে ময়দানে বিরোধী শিবিরের ওপরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। নির্বাচনের আগের দিন রাতে রাষ্ট্র তার সব নিরপেক্ষতা হারিয়ে ব্যালট বাক্স সরকারি
দলের প্রার্থীর পক্ষে সিল মেরে পূর্ণ করে। বিশ্বের ইতিহাসে কোনো রাষ্ট্রের এমন কর্মকান্ড নজিরবিহীন।
প্রশ্ন :সরকার পতন আন্দোলন শুরু করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, কার্যকরী আন্দোলনের জন্য কবে নাগাদ ২০ দল মাঠে নামতে পারবে?
সেলিম :সরকার পতনের আন্দোলন কখনো দিন, তারিখ, ক্ষণ হিসাব করে হয় না। এ সরকারের নূ্র্নতম জনসমর্থন নেই। জনগণ এ সরকারের বিরুদ্ধে। আমরা আশা করছি জনগণ যথাসময়ে রাজপথে নেমে আসবে এবং জনরোষে এ সরকার বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে।
প্রশ্ন :নির্বাচনের অনিয়মের অভিযোগ করেও সব নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত কি সঠিক বলে মনে করেন?
সেলিম :বিএনপির বিষয়ে মতামত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার আমার নেই।
প্রশ্ন : নতুন এই এলডিপিতে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের শূন্যতা অনুভব করেন কি না?
সেলিম :আমরা মোটেও কর্নেল (অব.) অলি আহমদের শূন্যতা অনুভব করি না। জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলো একজন প্রতিহিংসাপরায়ন, অদূরদর্শী, আত্মকেন্দ্রিক নেতার পেছনে ব্যয় করেছি। এজন্য এখন ভীষণ দুঃখ অনুভব করি।
প্রশ্ন :আপনার নেতৃত্বাধীন এলডিপি জাতীয় রাজনীতিতে কতটা ভূমিকা পালন করতে পারছে?
সেলিম :বর্তমানে মূলত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমাদের যতটুকু শক্তি আছে ততটুকু নিয়ে বিএনপির পাশে থাকতে চাই। জাতীয় রাজনীতিতে অবশ্যই আমাদের ভূমিকা জনগণের কাছে পরিষ্কার। আমরা স্বৈরশাসনের অবসান চাই এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে চাই।